ইউনিফর্ম মানবো কি না সেই প্রশ্ন পরে আসবে।
আগে প্রশ্ন আসবে ইউনিফর্ম নিয়ে।
~
তাত্ত্বিকভাবে (বাস্তবিক সেটা করা হয় না, হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখি না) সেক্যুলারিজমে বলা হয় কেউ তার ধর্মপালনে বাধাগ্রস্ত হবে না।
সেই হিসেবে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকেই এমন একটা নিয়মে(দরকার হলে একাধিক নিয়মও হতে পারে) চলতে হবে যেখানে কেউ তার ধর্মপালনে বাধা না পায়।
~
তাহলে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্মের নিয়ম সংবিধানের বিরুদ্ধে যায়। ইউনিফর্মের নিয়মও এমন করতে হবে যেন তাতে তার ধর্মপালনে বাধা না পায়।
~
একজন হিন্দুর সাথে এ নিয়ে কথা হচ্ছিলো, অবশ্য তাকে ইসলামফোবিক বলাই ভালো।
তার কথা এরকম, ইউনিফর্ম(হোক সেটা অধার্মিক) সবাইকেই মানতে হবে। হিজাব পালনে সুবিধা দেওয়া নাকি মুসলমানদের এক্সট্রা স্পেশাল সুবিধা দেওয়া হবে।
মুসলমানদের স্পেশাল সুবিধা দিতে যাবে কেন?
~তার ক্ষুদ্র মাথায় ঢোকেনি স্পেশাল সুবিধা কী আর অধিকার কী?
~তাকে বলেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে পৈতে,হাতে লাল ফিতা, শাখা সিঁদুর ইত্যাদি পড়ে স্কুলে আসতে পারবে না-এরকম নিয়ম করে দিলে তার মনোভাব কী হবে।
~সে কোনো উত্তর দেয় নি। (আসল ব্যাপারটা আপনারা বুঝতে পারছেন আশা করি।)
~তারপর আমি বলেছিলাম বলেছিলাম কমন নিয়মে মেয়েদের ইউনিফর্ম এমন করতে হবে যেন পূর্ণ শরীর ঢাকা হয়।
~উনি বলেছিলেন, এমন নিয়ম করলে হিদুরা মানবে কেন?
~আমি বলেছিলাম, তাতে কার ধর্মে কী সমস্যা হয়?
~উনিঃ সমস্যা আছে।
~কী সমস্যা?
~উনি এটার উত্তর দেন নি। (উত্তর থাকলে…)
{যারা বোঝেনি, আপনি 'ক' ধর্মের মানুষ। আপনার ধর্মে শুধু কোনোরকমে গোপনাঙ্গ ঢাকলেই যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে আপনার সারা শরীর ঢাকলে কী আপনার ধর্মে সমস্যা আছে?
যদি থাকে সেক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম করতে হবে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা আপনারটা পালনে বাধ্য নয়।
যেমন বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহের আইন আলাদা, হিন্দু বিবাহের আইন আলাদা, সম্পত্তির আইন আলাদা, এরকম।}
~উপরন্তু আমি উনাকে দেখিয়েছিলাম,
'যেহেতু ব্রহ্মা তোমাদের নারী করেছেন তাই দৃষ্টিকে অবনত রাখবে, উপরে নয় নিজেদের পা সামলে রাখো । এমন পোষাক পড়ো যাতে কেউ তোমার দেহ দেখতে না পায়।' - ঋগবেদ ৮ঃ৩৩ঃ১৯
~উনি আমার এই ম্যাসেজে হাহা দিয়ে চইলা গেলো।
~~~~~
সত্যি কথা হইলো, আমার ফ্রেন্ডলিস্টের বেশিরভাগ হিন্দু দাবি করা লোকই এই টাইপের হিদু। নিজের ধর্মই পালন করে না, নিজেদেরকেও ধ্বংস করে রেখেছে, আর বাকি সবারও লেজ কাটতে চায়।
~~~~~
এরপরেও যদি আপনার সেই এক ধারণাই থাকে আর বলেন এরকমঃ
"স্কুলে ভর্তি হয়েছে তাই স্কুলের নিয়ম মানতে বাধ্য।"
মানে ইনডাইরেক্টলি বলছেন সরকারি স্কুল কলেজ মুসলমানদের জন্য না।
অথবা, বলছেন স্কুল কলেজ হইলো অধর্মের জায়গা!
~
এর উত্তরটা সহ্য হবে না আপনার। 🥴
~~~~~
নিচের অংশটুকু রাফান আহমেদের প্রোফাইল থেকে নেওয়াঃ
‘সেক্যুলারিজম শুধু ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ না বা জনপরিসরে ধর্মীয় স্বাধীনতাও না। বরং সেক্যুলারিজম হলো ধার্মিকতার উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা এবং দ্বীন ও দুনিয়ার মাঝে বাঁধ দেয়া। অন্যকথায় এটা এমন শাসনব্যবস্থা যা ধর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে’
ইমোজেন ল্যাম্বার্ট*
সাংবাদিক ও গ্র্যাজুয়েট, লাফবোরোও ইউনিভার্সিটি ইউকে
* Imogen Lambert quoted in: Enes Bayraklı and Farid Hafez (etd.), Islamophobia in Muslim Majority Societies; p. 38
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে “ধর্মীয় পোশাক” পড়া যাবে না। এই আইন বুঝার আগে “ধর্ম” কাকে বলে সেটা একটু ক্রিটিক্যালি বুঝা দরকার। জনপরিসরে “ধর্ম” বলতে স্রেফ তোতাপাখির মত (মূলত) ইসলাম; (এছাড়াও) হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি বুঝানো হয়।
কিন্তু একাডেমিয়াতে “ধর্ম” শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ না। “ধর্ম”-এর জেনেরিক সংজ্ঞানুযায়ী লিবারেলিজম, ন্যাশনালিজম, হিউম্যানিজম, পুঁজিবাদ, কমিউনিজম এগুলোকেও “ধর্ম”ই বলা হয়। জুলিয়ান হাক্সলি তো হিউম্যানিজম প্রচার করার জন্য বই-ই লিখেছিলেন Religion without revelation নামে। এই আলাপ একাডেমিয়াতে এতই চালু যে জায়onবাদী (নাস্তিক) লেখক ইউভাল নোয়াহ হারারিও তার বইতে এসবকে “জাগতিক ধর্ম” বলেছেন। সুপারফিশিয়াল না হলে এটা হারারিরও চোখে পড়ত না।
যেমন সেক্যুলার জাতিবাদই বিবেচনা করুন। শাহবাগি লেখক মারুফ মল্লিক তার সদ্যপ্রকাশিত বইতে দেখিয়েছেন পশ্চিমা একাডেমিয়ায় জাতীয়তাবাদকে ধর্মের সাথেই তুলনা করার আলাপ বিদ্যমান। বিকল্প ধর্ম আরকি। এই আলাপ নতুন না সেখানে। লিবারেল সেক্যুলার হিউম্যানিজম আসলে খ্রিস্টান ধর্মকে ধর্মতত্ত্ব থেকে খারিজ করে তার সাথে গ্রীক দর্শনের মালমশলা দিয়া দাঁড় করানো প্রকল্প। যেখানে “আত্ম” হইলো শ্বেতাঙ্গবাদি লোকজন, আর “অপর” হইলো সেমাইট মানে মুসলমান আর ইhuদি। (যদিও ইhuদিরা সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসছে)
ভার//ত বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা (!) নিয়ে ভেবে দেখুন। শাহবাগি লেখক রফিক কায়সার প্রথমা প্রকাশনী (শাহবাগীদের নিউক্লিয়াস মিডিয়া) থেকে প্রকাশিত বইতে বড় পরিসরে আলাপ করে দেখিয়েছেন বাঙালি জাতিবাদ হচ্ছে বর্ণহিন্দুর সংস্কৃতিকে সেক্যুলার মতাদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করে বাংলার নবজাগরণ খাড়া করার রাজনৈতিক প্রকল্প। এখানে মুসলমান বা দলিতের স্থান নাই কারণ তারা হইলো “অপর”, বর্ণহিন্দু এখানে “আত্ম”। এই সেক্যুলার (!) মতাদর্শের কারণেই ৪৭ এ ভারত ভাগ ও ৭১ এ পাকিস্তান ভাগ হয়। ভুলে যাবেন না, লালাকৃষ্ণ আদভানির কথা, “হিন্দুরাষ্ট্র আর সেক্যুলার রাষ্ট্র আদতে সমর্থক।”
অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা (মহা ভুল অনুবাদ) আসলে নিজেই একটা বিকল্প ধর্ম। ব্রিটিশ অধ্যাপক উইল ক্যাভানওগ এই বিষয়টারে বলছেন Migration of the Holy। অর্থাৎ আগে খোদা ছিল পবিত্র, তার জায়গায় রাষ্ট্র বসছে। ধর্মের নামে কাউরে মারলে সেইটা খুব খারাপ, বাট রাষ্ট্রের নামে কাউরে মারলে সেইটা খুবই ভালো; দেশপ্রেমিকের পরিচয়। আদতে সেক্যুলার রাষ্ট্র কখনোই সব ধর্মের সমান অধিকারের জন্য খাড়া করা হয় নাই। ফরাসি বিপ্লবের হাত ধইরা এর স্ট্রাকচার খাড়া হইছেই ধর্মরে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। যে জায়গার সেক্যুলারিজমের যে দার্শনিক, নৈতিক ভিত্তি তা অলঙ্গনীয় ভাইবা বাকি মতাদর্শকে “ধর্ম” নাম দিয়া নিয়ন্ত্রণ করা, একঘরে কইরা দেয়া, অপ্রেসিভ সিস্টেম জারি রাখা।
আসলে সেক্যুলার স্টেট হইলো অল্টারনেটিভ থিওক্রেটিক স্টেট। নিজের থিওক্রেসি বাদ দিয়া বাকিসব ক্রেমি-মেসিরে পিডায়া সোজা করে রাখার কাম। মানে ঘুরিফিরি বটর তল আরকি। তবে সেক্যুলার স্টেটের মত সর্বময়বাদিতা (Totalitarianism) “প্রথাগত” থিওক্রেটিক স্টেট-এরও ছিল না।
Tags:
সেক্যুলারিজম