আসুন আজ কিছু রূপকথার কাহিনি ফাঁস করি!
ইসলাম সম্পর্কে বহুল প্রচলিত রূপকথার মধ্যে প্রচলিত কিছু রূপকথা হচ্ছে সাওম, হজ্জ, বিবাহ ইত্যাদি কিছু নিয়ম নাকি ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিকদের কাছ থেকে এসেছে।
বক্তা অনুযায়ী এরকম বলার উদ্দেশ্য দুই ধরণের। আমি সাধারণত বিষয়গুলো দুই গ্রুপ থেকে শুনেছি।
১. খ্রিস্টান (বিশেষত গোপন মিশনারি): তারা এ ধরণের অভিযোগের মাধ্যমে দেখাতে চায় মূলত, ইসলামের এ নিয়ম গুলো আমাদের থেকে 'ধার' করা। অর্থাৎ খ্রিস্টধর্মই সত্য। ইসলাম সত্য হতে হলে খ্রিস্টধর্মও সত্য হতে হবে। তবে সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়।
২. নাস্তিক/অ্যাপাথিস্ট/ডেইস্ট: তারা উদ্দেশ্য করে কোনো দ্বীনই সত্য না। সেগুলো মিথ্যে ধর্ম, আর সেগুলোর উপর ইসলাম 'ভিত্তি' করা, তাই ইসলামও মিথ্যে!
আমি অবশ্যই তাদের ভ্রান্তি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো সাওম, হজ্জ আলাদাভাবে। কিন্তু তার আগে সাধারণ সমাধান দিয়ে যেতে চাই, যাদের মাথায় বিবেক আছে তারা অবশ্যই বুঝবেনঃ
মূল সমস্যা এবং তার উত্তর
কষ্টিপাথর এক. এ সমস্ত প্রশ্নের পেছনে সবচেয়ে ভুল ধারণা হলো, 'শুধুমাত্র মুহাম্মদ (সাঃ) যেই বাণী নিয়ে এসেছেন' সেটিই ইসলাম।
এরকম বিশ্বাস না থাকলে ইহুদি থেকে অমুক নিয়ম এসেছে বলা যাবে না!
তাদের এই পূর্বে ধরে নেওয়া বিশ্বাসের শিকড়ে আঘাত হানে ইসলাম। বরং প্রত্যেক নবী রাসূলের কাজই ছিলো ইসলাম প্রচার। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেয়েছে মাত্র।
আল্লাহ বলেন,
এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসে নি। (কুরআন, সূরা ফাতির ২৪)
‘আর প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে হেদায়াতকারী’। [সূরা আর-রাদ: ৭]
‘আর আপনার আগে আমরা আগেকার অনেক সম্প্রদায়ের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম' [সূরা আল-হিজরী: ১০]
"আল্লাহর ইবাদাত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।' [সূরা আন-নাহল: ৩৬]
‘আর আমরা এমন কোন জনপদ ধ্বংস করিনি। যার জন্য সতর্ককারী ছিল না; [সূরা আশ-শূ’আরা: ২০৮]
এছাড়া এমন রাসূল পাঠিয়েছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে শুনিয়েছি ইতিপূর্বে এবং এমন রাসূল পাঠিয়েছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শোনাইনি। (সূরা নিসা ১৬৪)
উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইবন আতিয়্যাহ আন্দুলুসি রহ বলেন,
وقوله تعالى : ( ورسلاً لم نقصصهم عليك ) النساء/164 : يقتضي كثرة الأنبياء ، دون تحديد بعدد ، وقد قال تعالى ( وإن من أمة إلا خلا فيها نذير ) فاطر/24 ، وقال تعالى : ( وقروناً بين ذلك كثيراً ) الفرقان/38 ، وما يُذكر من عدد الأنبياء فغير صحيح ، الله أعلم بعدتهم ، صلى الله عليهم
আল্লাহ তাআলার বাণী: ‘এমন রাসূল পাঠিয়েছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শোনাই নি।’ এটা দাবী করে যে, নবীগণ অনেক, যাঁদের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। আল্লাহ তাআলা এও বলেছেন: ‘এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসে নি।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘তাদের মধ্যবর্তী অনেক সম্প্রদায়কে।’ আর নবীদের সংখ্যার ব্যাপারে যা উল্লেখ করা হয় তা সহিহ নয়। তাঁদের সংখ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ তাঁদের উপর রহমত নাযিল করুন। (আল মুহাররারুল ওয়াজীয ২/১৩৭)
বহু নবী এমনও রয়েছেন যাদের নাম কুরআন কারীমে উল্লিখিত হয়নি। এ কারণেই রাসূল ও নবীগণের সংখ্যায় মতভেদ রয়েছে।
- তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪:১৬৪
ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (২৬/২২৪)-তে এসেছে,
لا يعلم عددهم إلا الله ؛ لقوله تعالى : ( وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ ) غافر/78 ، والمعروف منهم من ذكروا في القرآن أو صحت بخبره السنَّة
‘তাঁদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। কেননা, তিনি বলেছেন, ‘আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, তাঁদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করি নি-সূরা গাফির ৭৮।’ তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধ তাঁরা যাঁদের উল্লেখ কোরআনে অথবা বিশুদ্ধ সূত্রে সুন্নাহতে এসেছে।’
মোদ্দাকথা আমাদের বলা উচিত অগণিত। কোনো সহিহ বর্ণনা দ্বারা নবী-রাসূলের সংখ্যা প্রমাণিত নয়। এক লক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হাদিসটি প্রসিদ্ধ হলেও সেটি যঈফ। দেখুনঃ
https://islamqa.info/en/answers/95747/how-many-prophets-are-there-in-islam
এখন অভিযোগে আসি। মূসা (আঃ) এর কোনো নির্দেশিত কাজ যদি ইহুদিরা করে, আর মুহাম্মদ (সাঃ) যদি বহাল রাখে তাহলে কি বলার সুযোগ আছে ইসলাম বাইরের কোনো ধর্ম থেকে সেই নির্দেশিত কাজটি এসেছে?
এরকম প্রশ্ন করলে প্রশ্নকর্তার প্রমাণ দিতে হবে সেই নিয়ম আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত কোনো নবী-রাসূলই দেন নি। বরং মানুষের তৈরি করা কোনো বানোয়াট ধর্ম থেকে এসেছে!
যদি বলেন রোজা ইহুদিদের থেকে এসেছে, তাহলে প্রমাণ করার দায়িত্ব আপনার ইসলামে রোজা ছিলো না, কোনো নবী রাসূলের সময়ই ছিলো না।
পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপর সাওমের নিয়ম ছিলো, মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে সেই নিয়মই বহাল রাখা হয়েছে!
এর মানে কি এই বোঝায় সাওমের নিয়ম ইসলামের বাইরের কোনো কিছু থেকে এসেছে?
আপনি কখনোই প্রমাণ করতে পারবেন না, কারণ সে পরিমাণ উপাত্ত আপনার কাছে নেই। সুতরাং এগুলো নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন/রূপকথা।
কষ্টিপাথর দুই. ফিল্টারিংঃ
(কষ্টিপাথর এক-এ না হলে এটা দেখবো আমরা ইংশা-আল্লাহ)
আচ্ছা আমাদের বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সরকার পরিবর্তন করা হয়। এখন সবসময় সরকার কি সেই সংবিধান আপাদমস্তক পরিবর্তন করে ফেলে?
যেগুলো রাখার সেগুলো তো থাকবেই। কোনো মানে হয় না সব পরিবর্তন করার।
এখন ধরুন, জাহেলী যুগের চার রকমের বিবাহের মধ্যে একটি হলো মোহরভিত্তিক বিবাহ। তো রাসূল (সাঃ) ফিল্টারিং করে বাকি ৩টি বাদ দিয়ে শুধু এটাই বহাল রাখলেন। অপরিবর্তিত রাখলেন।
এর মানে কি বলা যায়, ইসলামের বিবাহনীতির ভিত্তি জাহেলী সমাজ? প্রাইমারির স্টুডেন্টও বুঝবে এটা। যাই হোক এক নম্বর পয়েন্ট পার করে আসার সুযোগ নেই আবার দু'নম্বর পয়েন্ট!
সহোদর ভাইয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক, চাচাতো ভাইয়ের সাথে এবং গোত্রের অন্যান্য লোকদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত ছিল।
- আর রাহীকুল মাখতুম https://www.bjilibrary.com/1582/5
তো এখন এই সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখার (অপরিবর্তিতভাবে কিংবা মোডিফাই করে কিছুটা) নির্দেশ দিলে এটাই বোঝায় কি যে, জাহেলী সমাজ থেকে কপি করে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? বরং ভালো বলেই বহাল রাখা হয়েছে।
যারা বোঝার ইতোমধ্যেই বুঝেছেন।
আমরা স্পেসিফিক্যালি জিনিসগুলো দেখবো, এবং এই দুইপক্ষের আতশি কাচের মাধ্যমে।
সাওম কি ইহুদিদের থেকে এসেছে?
আশুরার সাওম পালনের হাদিস দেখিয়ে আবার কেউ কেউ দাবি করতে চায় ইসলামে সাওম ইহুদিবাদ থেকে এসেছে।
কিন্তু আসল কী ফ্যাক্টস হচ্ছে ইহুদিরা প্রচুর পথবিচ্যুত হলেও ইসলামের কিছু কিছু নির্দেশ এখনো পালন করে।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা (রমজানের) ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।
- কুরআন ২:১৮৩ (অনুবাদঃ মুহিউদ্দিন খান)
অর্থাৎ এতে বোঝা যায় আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্যেও রোজা ফরজ ছিলো। তাহলে তাদের সেই দাবিটা রইলো কোথায়?
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনু কাসীর (রহঃ) উল্লেখ করেছেন,
হযরত মু'আয (রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত আতা’ (রাঃ), হযরত কাতাদাহ (রাঃ)-এবং হযরত যহাক (রাঃ)-এর উক্তি এই যে, হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে প্রতি মাসে তিনটি রোযার নির্দেশ ছিল, যা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এ )-এর উম্মতের জন্যে পরিবর্তিত হয় এবং তাদের উপর এই বরকতময় মাসে রোযা ফরয করা হয়।
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও পূর্ণ একমাস রোযা ফরয ছিল। একটি মারফু হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ রমযানের রোযা তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর ফরয ছিল। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ “পূর্ববর্তী উম্মতের প্রতি এই নির্দেশ ছিল যে, এশার নামায আদায় করার পর যখন তারা শুয়ে যেত তখন তাদের উপর পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হারাম হয়ে যেতো।
- তাফসীর ইবনে কাসীর, ইফাবা, ২:১৮৩
এখানে ‘মিন ক্বাবলিকুম’ দ্বারা হযরত আদম (আ.) হতে শুরু করে হযরত ঈসা (আ.) এর যুগ পর্যন্ত সকল যুগের মানুষকে বুঝানো হয়েছে। এতে এ কথা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রোজা বা সাওম কেবল উম্মতে মোহাম্মদীর উপরই ফরদ্ব করা হয়নি বরং আদম (আ.) এর যুগ হতেই চলে আসছে ।
- আল্লামা আলূসী (রহঃ), তাফসীরে রুহুলে মা'আনি, ২:১৮৩
এই আয়াতের মাধ্যমে সাওম বা রোজার বিধান উম্মতে মোহাম্মদীর উপর বলবৎ (ফরদ্ব) করা হয়েছে যেমনটি পুর্ববর্তীদের উপর ছিলো। তবে সংখ্যা, নিয়ম বা অবস্থা পুনরায় বলবৎ করা হয়নি। হযরত সাঈদ বিন জোবায়ের (রা.) বলেন: পূর্ববর্তী নবীর উম্মতেরা রাতের অন্ধকার ঘনীভূত হওয়ার পর থেকে পরবর্তী রাত পর্যন্ত রোজা রাখতো এবং রামাদ্বানের রোজা ফরদ্ব হওয়ার আগে ইসলামেও এরকম বিধান ছিল।
- কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী (রহঃ), তাফসীরে মাজহারি, ২:১৮৩
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রত্যেক মাসে তিন দিন ও আশুরার দিনে সাওম ফরজ ছিল, যেমনি ভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর মাসে তিন দিন ও আশুরার দিনে সাওম ফরজ ছিল। পরবর্তীতে রমাদান মাসের দ্বারা এ সাওম রহিত হয়। মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উক্ত তিন দিনের সাওম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের সাওমের দ্বারা রহিত হয়, অতঃপর উক্ত কয়েক দিনের সাওম আবার রমাদানের সাওম দ্বারা রহিত হয়।
- তাফসীরে কুরতুবি, ২:১৮৩
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোযাসমূহের মধ্যে দাঊদ (আঃ)-এর রোযা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তিনি এক দিন রোযা রাখতেন এবং পরবর্তী দিন রোযা রাখতেন না। আল্লাহর নিকট দাঊদ (আঃ)-এর সালাত অধিক প্রিয়। তিনি রাতের অর্ধাংশ ঘুমাতেন, এক-তৃতীয়াংশ সালাতে কাটাতেন এবং আবার এক-ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন।
- সুনানে ইবনু মাজাহ ১৭১২, সহিহ
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি দু’ দিন রোযা রাখে এবং এক দিন রাখে না, তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? তিনি বলেনঃ কেউ কি তার সামর্থ্য রাখে? ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি এক দিন রোযা রাখে এবং এক দিন রাখে না? তিনি বলেনঃ সেটা হলো দাঊদ (আঃ)-এর রোযা। ‘উমার (রাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি এক দিন রোযা রাখে এবং দু’ দিন রাখে না? তিনি বলেনঃ আমি পছন্দ করি যে, আমাকে এ ধরনের রোযা রাখার সামর্থ্য দান করা হোক।
- সুনানে ইবনু মাজাহ ১৭১৩, মুসলিম ১১৬২, আবূ দাউদ ২৪২৫, আহমাদ ২২০২৪, ২২১৪৪, সহীহ আবী দাউদ ২০৯৬, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ইমাম কুরতুবি (রহঃ) লেখেন, ‘পয়গম্বর মুসা ও ঈসা (আঃ) এর উম্মতের ওপর আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজা ফরজ করেছিলেন। কিন্তু তারা তাতে পরিবর্তন ঘটিয়েছে।’
- তাফসীরে কুরতুবি ২/২৭৪
তাহলে দাবিকারকদের রূপকথা কষ্টিপাথর এক এর কাছেই ধরাশায়ী!
আমরা কিছু ইসরায়েলী সোর্স থেকেই দেখাতে পারি পূর্ববর্তী নবী রাসূলদের রোজা।
সাওমের উল্লেখ পাবেন আপনিঃ
বিচারকর্তৃগণ ২০:২৬, ১ শমুয়েল ৭:৬, ৩১:১৩, ২ শমুয়েল ১২:১৬, ১২:২১, ১২:২২, ১২:২৩, ১ রাজাবলি ২১:৯, ২১:১২, ২১:২৭, ১ বংশাবলি ১০:১২, ২ বংশাবলি ২০:৩, ইষ্রা ৮:২১, ৮:২৩, নহিমিয় ১:৪, ৯:১, ইষ্টের ৪:৩, ৪:১৬, ৯:৩১, গীতসংহিতা ৩৫:১৩, যীশাইয় ৫৮:৩-৭, যিরমিয় ১৪:১২, ৩৬:৯, দানিয়েল ৯:৩, যোয়েল ২:১২, যোনা ৩:৫, সখরিয় ৭:৩, ৭:৫, ৮:১৯, মথি ৪:২, ৬:১৬-১৮, ৯:১৪-১৫, মার্ক ২:১৮-২০, লূক ২:৩৬-৩৭, ৫:৩৩-৩৫, ১৮:১২, প্রেরিত ১৩:২-৩, ১৪:২৩, ২৭:৯ ইত্যাদি।
আসুন এবার আশুরার রোজা সম্পর্কে দেখিঃ
এখানে কী ফ্যাক্ট হলো রাসূল (সাঃ) আগে থেকেই আশুরার সিয়াম থাকতেন, এবং স্বাভাবিকভাবেই মূসা (আঃ) এর ঘটনাটাও জানতেন, জানতেন না এটা অস্বাভাবিক।
ইহুদিদের থেকে শোনার পর তিনি বাকিদের পালনের নির্দেশ দেন এবং সাথে জোরও দেন। অন্যতম সম্ভাব্য কারণ ছিলো, ইহুদিদের মন বিগলিত করার জন্য।
হাদিস থেকেই দেখাই,
‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ ‘আশূরার সওম পালন করত এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও এ সওম পালন করতেন। যখন তিনি মাদ্বীনায় আগমন করেন তখনও এ সওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমাযানের সওম ফরজ করা হল তখন ‘আশূরার সওম ছেড়ে দেয়া হলো, যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।
- সহিহুল বুখারী ২০০২ (তাওহীদ পাব্লিকেশন্স)
(কুরাইশরা কেন কী বুঝে সিয়াম থাকতো সেটা পরে আলোচনা করছি)
বিষয়টা ইমাম কুরতুবি (রহঃ) ব্যাখ্যা করেছেন তার আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীস কিতাব মুসলিম বইয়ের ৩য় খণ্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায় (ভাবানুবাদ):
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদ্বীনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীগণ ‘আশূরার দিনে সওম পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সওম পালন কর কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা (আঃ) সওম পালন করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে সওম পালন করেন এবং সওম পালনের নির্দেশ দেন। - সহিহুল বুখারী ২০০৪, ৩৩৯৭, ৩৯৪৩, ৪৬৮০, ৪৭৩৭, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১৩০, আহমাদ (১/২৯১ এবং ৩১০), মুসলিম (১১৩৫) (১২৮), আবু দাউদ (২৪৪৪) এবং ইবনে মাজাহ (১৭৩৪)।এর ভিত্তিতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদীদের অনুকরণে আশুরার দিনে রোজা রাখতেন না, কারণ তিনি তাদের কাছে আসার আগে এবং জানার আগেই এই দিনে রোজা রাখতেন। তাদের সম্পর্কে. বরং তিনি যখন মদীনায় এসেছিলেন তখন যা ঘটেছিল তা হল যে তিনি ইহুদীদের হৃদয়কে নরম করার এবং তাদের জয় করার জন্য এটির নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তা মেনে চলেছিলেন, যেমনটি তাদের সাথে এক কেবলা করার কারণও ছিল। এটি এমন একটি সময় ছিল যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহলে কিতাবদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকা পছন্দ করতেন যে বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
মূল আরবি উৎসঃ https://shamela.ws/book/132524/1441
অর্থাৎ এখানেও স্পষ্ট, মূসা (আঃ) সিয়াম থেকেছিলেন। আর সে হিসেবে সকল মুসলিম এ দিনে রোজা রাখতে পারবে (যদিনা পরের কোনো রাসূলের মাধ্যমে সেটা নিষিদ্ধ করা হয়)।
যেহেতু নবী-রাসূলগণ একে অপরের অধিক নিকটবর্তী সেহেতু একে অপরের উপর তাদের দাবিই বেশি। ইবাদত বিকৃত করা ইহুদিদের তো প্রশ্নই আসে না।
মুহাম্মদ (সাঃ) নবী-রাসূলগণের সম্পর্কের উপমা এভাবে দিয়েছেন,
নবীগণ পরস্পরে বৈমাত্রেয় ভ্রাতা সমতুল্য।
- সহিহ মুসলিম ইফাবা ৫৯১৮, ৫৯১৯; আবু দাউদ ৪৬৭৫
আবার আশুরায় ফিরি। রাফিযি শিয়াদের অভিযোগ এরকম, যখন ইহুদিরা বললো এ দিনে মূসা (আঃ) শত্রু (ফেরাউনের) কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, আর মুহাম্মদ (সাঃ) এটা সহজেই বিশ্বাস করে নিলেন? এটা কি অযৌক্তিক নয়?
এটা মূলত আশুরার সাওম অস্বীকারের জন্য শিয়াদের পেশ করা একটা দুর্বল যুক্তি। এটা উল্লেখ করলাম কারণ এরকম প্রশ্ন ইসলামবিদ্বেষীদের থেকেও আসতে পারে।
আল-মাযিরী (রহঃ) এই সমস্যা এবং এর প্রত্যুত্তরে বলেছেনঃ
ইহুদিরা যা বলে তা গ্রহণ করা যায় না (এবং সরাসরি সত্য হিসাবে গ্রহণ করা যায় না), তাই এটি হতে পারে যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী পেয়েছিলেন যার মাধ্যমে ইহুদিরা যা বলেছিল তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলেন, কিংবা তিনি বিভিন্ন উৎস সম্পর্কে সে ঘটনা সম্পর্কে জেনেছিলেন, যাতে তিনি উপসংহারে আসেন যে এটি সত্য।
সূত্রঃ শরহে মুসলিম ৮/১১
শাইখ আল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন:
যদিও এই রোজাটি মূলত আহলে কিতাবদের মতো করার উদ্দেশ্যে ছিল না, তার এই কথা, "আমরা আপনাদের চেয়ে মূসার নিকটবর্তী" রোজা পালনের জন্য এই কথাটি একটি স্পষ্টিকরণ এবং ইহুদিদের ব্যাখ্যা করে যে কী 'আপনি মূসার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন, আমরাও করি এবং আমরা আপনার চেয়ে মুসার নিকটবর্তী।'
সূত্রঃ ইকতিদা আস-সীরাতুল মুস্তাকীম, পৃ. ১৭৪
রাসূলুল্লাহ সে বিষয়গুলোতে সামঞ্জস্য রাখতেন আহলে কিতাব (ইহুদি, খ্রিস্টানদের) সাথে যেগুলোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পান নি তিনিঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রহ.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চুল পিছনে দিকে আঁচড়ে রাখতেন আর মুশ্রিকগণ তাদের চুল দু‘ভাগ করে সিঁথি কেটে রাখত। আহলে কিতাব তাদের চুল পিছন দিকে আঁচড়ে রাখত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আহলে কিতাবের অনুসরণ পছন্দ করতেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চুল দু’ভাগ করে সিঁথি করে রাখতে লাগলেন।
- বুখারী ৩৫৫৮, ৩৯৪৪, ৫৯১৭, মুসলিম ৪৩/২৪ হাঃ ২৩৩৬, আহমাদ ১২৩৬৪
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় স্পষ্ট নির্দেশ আসার আগে আশুরার সিয়াম পালনেও আমরা সমস্যা দেখছি না।
এখানে ইমাম আল-বুখারী (রহঃ) এর ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান সুস্পষ্ট, যে এই হাদিসটি তিনি আশুরার রোজার হাদিসের পরেই উল্লেখ করেছেন!
৩৯৪৩ নম্বর হাদিসেই আশুরার রোজার কথা বলার ছিলো।
ইমাম কুরতুবি (রহঃ) বলেছেন,
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোজা রেখেছিলেন (আশুরা) এই বিষয়ে তাদের (আহলে কিতাবের) মতই করার শিরোনামে আসতে পারে, কারণ এটি ছিল একটি ভাল কাজ
বলা যেতে পারে যে, মহান আল্লাহ তাকে সেই দিনে রোজা রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন, তারপর যখন তিনি মদীনায় আসেন, তখন তিনি ইহুদিদের ওই দিনে রোজা রাখতে দেখেন, তাই তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন যে, কী কারণে তারা সেই রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
- আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীস কিতাব মুসলিম ৩/১৯১
আল-হাফিয ইবনে হাজার (রহ.) বলেন:
যাই হোক না কেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের-অর্থাৎ ইহুদীদের অনুকরণে রোজা রাখেননি, কারণ এর আগে তিনি রোজা রাখতেন এবং সেটা সেই সময়ে যখন নবী (সা.) যে বিষয়ে তাকে নিষেধ করা হয়নি সে বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাবদের মতই করতে পছন্দ করতেন।
- ফাতহুল বারী, ৪/২৪৮
এবার দেখা যাক, কুরাইশরা কেন রোজা রাখতো আশুরা তে!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাণী: “কুরয়াশরা জাহিলিয়াতে আশুরার রোজা রাখত,” ইঙ্গিত করে যে এই দিনে রোজা রাখা তাদের কাছে ফরজ ছিল এবং তারা এর ফজিলত সম্পর্কে অবগত ছিল। সম্ভবত তারা তার উপবাসের উপর ভিত্তি করে ছিল: এটি ইব্রাহিম এবং ইসমাইলের (আঃ) শরিয়ত থেকে এসেছে; তারা তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল এবং হজ্জের অনেক হুকুম এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ছিল।
আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালকীস কিতাব মুসলিম, ৩/১৯০-১৯১
কুরাইশরা কেন সেদিন রোজা রেখেছিল সে সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, অনুগ্রহ করে দেখুন আল-মুফাস্সাল ফি তারীখ আল-আরব ক্বাবল আল-ইসলাম, ১১/৩৩৯-৩৪০
আসল কথা হলো কুরাইশরা এই দিনটিকে পূজা করতো!
ইবনুল কাইয়্যিম বলেছেন: নিঃসন্দেহে কুরাইশরা এই দিনটিকে পূজা করত এবং তারা এই দিনে কাবা শরীফ ঢেকে দিত এবং এই দিনে রোজা রাখা হল পূজার অংশ।
(অনুরূপ তথ্যঃ বুখারী ১৫৯২)
কিন্তু তারা নতুন চাঁদ দেখে মাসগুলো বের করতেন, তাই তাদের জন্য ছিল মুহাররমের দশম দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন তিনি লোকদেরকে এই দিনটির উপাসনা করতে এবং রোজা পালন করতে দেখলেন, তখন তিনি তাদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং তারা বললেন: এটি সেই দিন যেদিন আল্লাহ মূসা (আঃ) ও তাঁর (আঃ) কে রক্ষা করেছিলেন। ফেরাউনের লোকেরা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “আমরা তাদের চেয়ে মূসার নিকটবর্তী”, তাই তিনি এই দিনে রোজা রেখেছিলেন এবং এই দিনের তাৎপর্যের স্বীকৃতিস্বরূপ মুসলমানদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তিনি (আল্লাহর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে তিনি এবং তাঁর উম্মত ইহুদীদের চেয়ে মূসার নিকটবর্তী ছিলেন;
যদি জিজ্ঞেস করা হয়ঃ আপনি কিভাবে জানলেন যে মূসা (আঃ) এ দিনে রোজা রাখতেন? আমরা বলিঃ সহীহায়নে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেনঃ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন যেদিন আল্লাহ মূসা (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়কে রক্ষা করেছিলেন এবং ডুবেছিলেন। ফেরাউন এবং তার সম্প্রদায়, তাই মূসা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার জন্য এই দিনে রোজা রেখেছিলেন এবং আমরাও এই দিনে রোজা রাখি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমরা তোমাদের চেয়ে মূসার নিকটবর্তী হওয়ার অধিক হকদার”; তাই তিনি এই দিনে রোজা রেখেছেন এবং (মুসলিমদের) রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
যেহেতু তারা যা বলেছিল তা তিনি অনুমোদন করেছিলেন এবং বলেননি যে তারা মিথ্যা বলছে, এটি জানা যায় যে মূসা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই দিনে রোজা রেখেছিলেন, তাই এটি হিজরতের আগে এই দিনটির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিল এবং এইভাবে এটি আরও জোরদার হয়ে ওঠে যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনার বিভিন্ন স্থানে আহবান করার জন্য একজন আহবানকারীকে পাঠালেন, এই দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন এবং যারা আহার করেছেন তাদের নির্দেশ দিলেন। দিনের বাকি সময় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
(অনুরূপ তথ্য পাবেনঃ বুখারী হাদিস নং ২০০৭)
ঘটনাটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে এটি তাদের উপর জোর দিয়ে ফরজ করা হয়েছিল এবং বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
- জাদ আল-মাআদ (২/৬৭)
একটা বিষয় তুলে ধরা ভালো, ইহুদিরা যখন ঔদ্ধত্যবশত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নবী হিসেবে মেনে নিলো না, তখন বেশিরভাগ কাজেই তাদের বিপরীত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।
ক্বিবলা আলাদা করা হয়েছিলো, রোজার নিয়ম কানুন পরিবর্তন করা হয়েছিলো ইত্যাদি।
যেমনঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাবত লোকেরা যথাসময়ে ইফতার করবে তাবত তারা কল্যাণের সাথে থাকবে। তাই তোমরা যথাসময়ে ইফতার করো। কারণ ইহুদীরা বিলম্বে ইফতার করে।
- ইবনু মাজাহ ১৬৯৮, আবূ দাউদ ২৩৫৩, আহমাদ ২৭২১৮, মিশকাত ১৯৯৫, সহীহ আবী দাউদ ২০৩৮
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাদের ও কিতাবীদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া।
- সহিহ মুসলিম ১০৯৬ (হাদিস একাডেমী ২৪৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৪১৭, ইসলামীক সেন্টার ২৪১৬)
‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ‘আশূরার দিন সিয়াম পালন করেন এবং লোকদের সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন। তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়াহুদী এবং নাসারা এই দিনের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বললেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্হায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। (মুসলিম ২৫৫৬)
'তোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখ।'
- মুসনাদে আহমদ ১/২৪১
আশা করি কিছুটা এলোমেলো হলেও মূল বক্তব্য উপস্থাপন করতে পেরেছি।
এবার সারকথা হিসেবে কষ্টিপাথরে যাচাই করা যাক।
কষ্টিপাথর একঃ সাওমের প্রমাণ আগের নবী-রাসূলদের মধ্যে পাওয়া যায়। আশুরার সাওমের প্রমাণও মূসা (আঃ) এর থেকে পাওয়া যায়। তাছাড়াও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই সাওম রাখার বিষয়টি প্রমাণিত। এক কথায়, রোজা, আশুরার রোজা ইসলামেরই অংশ ছিলো।
এবার সমালোচকরা কী বলবেন শুনি?
হজ্ব কি পৌত্তলিকদের থেকে এসেছে?
হজ্বের বিস্তারিত ইতিহাস আমাদের কাছে নেই। তবে যেটুকু আছে সেটুকুই উল্লেখ করবো।
কুরআন কী বলেছে হজ্জ্ব নিয়ে?
"তোমাদের প্রতি কোন গুনাহ নেই যদি তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ খোঁজ কর এবং যখন তোমরা আরাফাত হতে ফিরবে তখন মাশআরুল হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং তাঁকে স্মরণ করবে যেরূপ তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, বস্তুতঃ তোমরা এর আগে ছিলে পথভ্রষ্টদের অন্তর্গত।
তারপর তোমরা ফিরে আসবে যেখান থেকে লোকেরা ফিরে আসে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হও, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
অতঃপর মহান হাজ্জের করণীয় কার্যাবলী সমাপ্ত করবে, তখন আল্লাহর স্মরণে মশগুল হও, যেমন তোমরা নিজেদের বাপ-দাদাদের স্মরণে মশগুল থাক, বরং তার চেয়েও বেশি স্মরণ কর। লোকেদের কেউ কেউ বলে থাকে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ দুনিয়াতেই প্রদান কর, বস্তুতঃ সে আখেরাতে কিছুই পাবে না।
লোকেদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা বলে থাকে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দাও এবং আখেরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা কর।
এরাই সেই লোক, যাদের কৃতকার্যে তাদের প্রাপ্য অংশ রয়েছে এবং আল্লাহ সত্বর হিসাবগ্রহণকারী।
তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে; অতঃপর যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি ক'রে দু'দিনে চলে যায় তার প্রতি কোন গুনাহ নেই এবং যে ব্যক্তি অধিক সময় পর্যন্ত বিলম্ব করবে, তার প্রতিও গুনাহ নেই, এটা তার জন্য যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করবে এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকবে এবং জেনে রেখ, তোমরা সকলেই তাঁরই দিকে একত্রিত হবে।"
- কুরআন ২:১৯৮-২০৩ (অনুবাদঃ তাইসীরুল কুরআন)
আর আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন: “গৃহের চারপাশে তাওয়াফ করা এবং সাফা ও মারওয়াহর মধ্যে সাঈ করা এবং জামারাতে পাথর ছুঁড়ে মারার বিধান ছিল শুধুমাত্র এই জন্য যে, যা স্মরণ করা যায়।
-আল-বায়হাকী (৫/১৪৫) এটিকে মুআল্লাক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন এবং একটি মারফু' প্রতিবেদন হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যদিও এতে কিছু দুর্বলতা রয়েছে।
তাই মুসলিম হজ্জের আচার-অনুষ্ঠানগুলোকে সম্মান করে কারণ আল্লাহ তাকে তাদের ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন, যেমন আল্লাহ বলেছেন (অর্থের ব্যাখ্যা):
"এই (তার অবস্থা), আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করবে সে তো তার অন্তরস্থিত আল্লাহ-ভীতি থেকেই তা করবে।"
- সূরা আল-হজ্জ ২২:৩২
আসলাম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে দেখেছি। আর তিনি বললেন, যদি আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তাহলে আমিও তোমায় চুম্বন করতাম না।
- বুখারী ১৬১০, ১৫৯৭
হজ্ব কখন ফরজ হয়েছিলো?
স্মরণ কর যখন আমি ইবরাহীমকে (পবিত্র) গৃহের স্থান চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম, (তখন বলেছিলাম) আমার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার গণ্য করবে না, আর আমার গৃহকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, নামাযে কিয়ামকারী, রূকু‘কারী ও সেজদাকারীদের জন্য। আর মানুষের মাঝে হাজ্জের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে, আর সব (পথক্লান্ত) শীর্ণ উটের পিঠে, বহু দূরের গভীর পর্বত সংকুল পথ বেয়ে।
- কুরআন ২২:২৬-২৭
অর্থাৎ, ইব্রাহিম (আঃ) এর সময়েই হজ্বের বিধান আসে।
তাহলে পৌত্তলিকদের থেকে হজ্ব এসেছে এটা সুস্পষ্ট মিথ্যাচার।
বরং পৌত্তলিকরা পবিত্র হজ্বকে বিকৃত করেছে, তারা কাবাকেই উপাসনা করতে শুরু করে দিয়েছিলো, তাতে মূর্তি রেখে জঘন্য অপরাধ শুরু করে দিয়েছিলো।
ইবনে কাছীর এই আয়াতের (৩/২২১) তাফসীরে বলেছেন:
এর অর্থ হল: (হে ইব্রাহিম) লোকদের কাছে হজের ঘোষণা দাও, তাদেরকে এই গৃহে হজ্জ করার জন্য আহ্বান কর যা আমি তোমাকে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছি। উল্লেখ করা হয়েছে যে তিনি বলেছিলেন, "হে প্রভু, আমি কীভাবে লোকদের কাছে এটি ঘোষণা করব যখন আমার আওয়াজ তাদের কাছে পৌঁছায় না?" তিনি বললেন, ডাক, আমরা পৌঁছে দেব। অতঃপর তিনি তার মাকামে (বর্তমানে মাকামে ইব্রাহিম নামে পরিচিত, একটি স্থাপনা, যেটার উপর দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম আঃ কাবা নির্মান করেছিলেন) দাঁড়ালেন - অথবা বর্ণিত আছে, পাথরের উপর বা আল-সাফায় বা আবু কুবায়েস (একটি পাহাড়)-এর উপর - এবং বললেন: "হে লোকসকল, তোমাদের পালনকর্তা একটি ঘর গ্রহণ করেছেন, তাই আসুন। এটি তীর্থযাত্রায়।" এবং বলা হয়েছিল যে পর্বতগুলি নিজেদেরকে নিচু করেছিল যাতে তাঁর কণ্ঠ পৃথিবীর সমস্ত অংশে পৌঁছতে পারে এবং যারা এখনও গর্ভে বা পুরুষদের কোমরে ছিল তারাও শুনতে পেয়েছিল, এবং যা শুনেছে সেগুলি, শহর, যাযাবর ছাউনি এবং গাছ।
(অসমাপ্ত, চলবে)
(আপনাদেরকে ইতোমধ্যেই দুটো কষ্টিপাথর দিয়ে দিয়েছি, ঘষে নিবেন)