"আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ ইবন আবি সারহ" - মুরতাদের শাস্তি নাকি অন্যায়ভাবে হত্যা?
রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ ইবনে আবি আস-সারকে শুধুমাত্র মুরতাদ হওয়ার জন্যই হত্যা করার নির্দেশ দেননি।
বরং, হাদিস এবং অন্যান্য সূত্র থেকে জানতে পারি, একবার তিনি ইসলাম ত্যাগ করার পরে, তিনি নবী (সাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মক্কার মুশরিকদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন।
মক্কা বিজয়ের পরে মুশরিকদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও যে কয়েকজনের জন্য ক্ষমা ছিলো না সে তাদেরই একজন ছিলো।
[ মুরতাদের বিধান সম্পর্কে না জেনে থাকলে দেখে নিন: মুরতাদের শাস্তি সম্পর্কে তথ্যবহুল বিশ্লেষণ - এমডি আলি ]
আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ আবি সারহ সম্পর্কে নাসাঈতে বলা আছে,
গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ ৪০৭০
৪০৭০. যাকারিয়া ইবন ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, সূরা নাহলের আয়াত (مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ إِلَى قَوْلِهِ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ) (যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে, তবে যাকে বাধ্য করা হয় সে ব্যতীত ..... তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি) [১৬ঃ১০৬] মনসুখ হয়ে গেছে। এদের মধ্যের কিছু লোককে বাদ দেয়া হয়েছে, যাদের কথা পরের আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছেঃ (ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ هَاجَرُوا مِنْ بَعْدِ مَا فُتِنُوا ثُمَّ جَاهَدُوا وَصَبَرُوا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَحِيمٌ) (যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে, তোমার প্রতিপালক এসবের পর তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।) [১৬ঃ১১০] এই আয়াতটি আবদুল্লাহ্
ইবন সা'দ ইবন আবূ সারহ-এর ব্যাপারে নাযিল হয়, যিনি মিসরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুহরী ছিলেন। পরে তিনি শয়তানের প্ররোচনায় কাফিরদের সাথে মিলিত হন। মক্কা বিজিত হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার আদেশ দেন। এ সময় উসমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার নিরাপত্তা প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে নিরাপত্তা দান করেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=78101
সুনানে আবু দাঊদে আছে,
গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি (كتاب الحدود)
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৮
১. মুরতাদ সম্পর্কে বিধান
৪৩৫৮। ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু সা‘দ ইবনু আসুস সারহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (ওয়াহী) লেখকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে এবং সে কাফিরদের সঙ্গে মিশে যায়। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। কিন্তু উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) তার জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan) http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=61726
মওলানা ওয়াহিদউদ্দিন খানও মন্তব্য করেছেন যে, সে মুশরিকদের সাথে যোগ দিয়েছিলো যারা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শত্রু ছিলো:
আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ, যিনি মুসলিম হয়েছিলেন এবং নবীর দ্বারা ওহীলেখক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরে তিনি মুরতাদ হন এবং কাফেরদের সাথে যোগ দেন। মক্কা বিজয়ের পর, যখন তিনি শুনেছিলেন যে নবী তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন, তখন তিনি তার দুধ-ভাই উসমানের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে উসমান তাকে আশ্রয় দেন, অতঃপর তাকে নবীর কাছে নিয়ে যান এবং আবারো তার ইসলামে বাইয়াত দেওয়ার অনুরোধ করেন। রাসূল (সাঃ) চুপ করে থাকলেন। অতঃপর উসমান দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, তখন রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ'র আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করলেন। [1]
ইসলামিক স্কলার সফি-উর-রহমান আল-মুবারকপুরী উল্লেখ করেছেন, যে তিনি ইসলাম ত্যাগ করার পর সে নবী (সাঃ) এর কিছু সঙ্গীকে হত্যা করেছিলো। সুতরাং, রাসূল (সাঃ) তাঁকে হত্যা বৈধ ঘোষণা করেছিলেন সে যা করেছিলো তার ভিত্তিতে। কিন্তু পরে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বড় বড় পাপীদের মধ্য থেকে নয় ব্যক্তির রক্ত মূল্যহীন সাব্যস্ত করে নির্দেশ প্রদান করেন যে, যদি তাদেরকে কা‘বার পর্দার নীচেও পাওয়া যায় তবুও তাদের হত্যা করা হবে। তাদের নাম হচ্ছে যথাক্রমে (১) আবদুল উযযা বিন খাতাল, (২) আব্দুল্লাহ বিন সা‘দ বিন আবূ সারাহ, (৩) ইকরামা বিন আবূ জাহল, (৪) হারিস বিন নুফাইল বিন ওয়াহাব, (৫) মাকীস বিন সাবাবাহ, (৬) হাব্বার বিন আসওয়াদ, (৭) ও (৮) ইবনু খাতালের দুই দাসী যারা কবিতার মাধ্যমে নাবী কারীম (ﷺ)-এর বদনাম রটাত, (৯) সারাহ যে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানদের মধ্যে কারো দাসী ছিল। এর নিকটে হাতেব লিখিত পত্রখানা পাওয়া গিয়েছিল।
ইবনু আবি সারাহর ব্যাপার ছিল উসমান ইবনু আফফান তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন এবং তার প্রাণ রক্ষার জন্য সুপারিশ করলেন। নাবী (ﷺ) তাকে ক্ষমা করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করলেন। কিন্তু এর পূর্বে নাবী কারীম (ﷺ) এ আশায় দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকলেন যে, কোন সাহাবী উঠে এসে তাকে হত্যা করবে। কারণ এ ব্যক্তিই ইতোপূর্বে একবার ইসলাম গ্রহণ করে মদীনা হিজরত করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সে পুনরায় মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল (তবুও তার পরবর্তী সময়ের কার্য কলাপ ইসলামের সৌন্দর্য বর্ধনে আয়নাস্বরূপ ছিল, আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হউন)।
সূত্রঃ আর রাহীকুল মাখতুম, তাওহীদ পাব্লিকেশন্স http://www.hadithbd.com/books/link/?id=6395
ইংরেজি অনুবাদ থেকে,
“Shedding blood of none of the worst criminals was declared lawful even under the curtains of Al-Ka’bah. Some of them were later pardoned. Abdul-Uzza bin Khatal was found holding on to the curtain of the Ka’bah and was killed. Abdullah bin Abu Sarh had become a Muslim and emigrated, but later left Islam and killed some of the companions.” [2]
এবং আল্লাহই ভালো জানেন।
Refferences:
[1] Muhammad: A Prophet for All Humanity By Maulana Wahiduddin Khan page 327
[2] Ar-Raheeq Al-Makhtum The Sealed Nectar Biography Of The Noble Prophet [Revised Edition January 2002] By Safi-Ur-Rahman Al-Mubarakpuri page 468
মূল লেখার লিংকঃ https://discover-the-truth.com/2015/03/24/abdullah-ibn-saad-ibn-abi-sarh-apostasy-or-murder/
অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ তাহসিন আরাফাত